খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪২৫

জিএম কাদেরকে কাউন্সিলের চ্যালেঞ্জ পদচ্যুত নেতাদের

গেজেট ডেস্ক

“২৮ তারিখের কোরামবিহীন প্রেসিডিয়াম বৈঠকটি গঠনতন্ত্র মোতাবেক ডাকা হয়নি। সেই প্রেসিডিয়ামের মিটিংয়ের দোহাই দিয়ে যে সিদ্ধান্ত উনি (জিএম কাদের) নিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রূপে বেআইনি এবং অবৈধ।মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম বলেন।

জাতীয় পার্টি থেকে মহাসচিব ও দুই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দিয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাকে ‘বেআইনি’ দাবি করেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।তারা জাতীয় পার্টিতে ‘স্বপদেই বহাল’ আছেন এবং দল ছাড়বেন না বলেও দাবি করে অব্যাহতি পাওয়া এই কো-চেয়ারম্যান বলেন, কাউন্সিল থেকেই সব সিদ্ধান্ত আসতে হবে।

“সুতরাং আমরা সকলে পার্টিতে স্বপদে বহাল আছি এবং পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুই আছেন।”

অব্যহতিপত্রে, পার্টির বিরুদ্ধে কাজ করার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “পার্টির বিরুদ্ধে আমরা কোনো কাজ করিনি।”

জ্যেষ্ঠ নেতাদের একাংশের বিদ্রোহের মধ্যে নতুন মহাসচিব বেছে নেওয়ার পর সোমবার জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং দুই কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মজিবুর রহমান চুন্নুকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

জাতীয় পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞিপ্তিতে বলা হয়, গত ২৫ জুন দলের মতবিনিময় সভায় সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মজিবুর রহমান চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এর তিন দিন পর গত ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সভায় এই তিনজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

“এমতাবস্থা পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই তিনজনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ পার্টির সকল পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এ আদেশ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।”

এর বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারের কনফারেন্স হলে সাংবাদিকদের সামনে আসেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, মজিবুল হক চুন্নুসহ অতীতে অব্যহতি পাওয়া কাজী ফিরোজ রশীদ (যিনি জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান)।

‘জিএম কাদের প্রতি আহ্বান’

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “আমরা এখনো বলব, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাউন্সিল করি। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত করবো কে থাকবেন না থাকবেন। আপনি তো পার্টির চেয়ারম্যান আছেন। কাউন্সিলে সব হবে। কাউন্সিলই দলের সর্বোচ্চ অঙ্গ।

“এখনো সময় আছে, আমরা পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চাই, পার্টি ঐক্যবদ্ধ থাকুক। অনতিবিলম্বে কাউন্সিল ডাকুন… যেসব বিষয় আমরা তুলেছি সেগুলো কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হোক এবং কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এগুলোর সমাধান হবে।”

দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাউন্সিল ঘোষণা করার পরে কাউকে সরানো যায় না। এই সিদ্ধান্ত কাউন্সিল থেকেই আসতে হবে। কাউকেই কারণ দর্শানো নোটিস ব্যতিত অব্যাহতি দেওয়া যাবে না।

“এটা ন্যাচারাল জাস্টিস বিরুদ্ধ। প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্তও যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলেও তাকে কারণ দর্শানো নোটিস দিতে হবে।”

কাউন্সিল ঘোষণার পরে দলের ভেতরে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, অব্যহতি, বহিষ্কার করা যাবে না কেন, সংবাদ সম্মেলনে তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন আনিসুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “ধরেন, আমি নিজেকে প্রার্খী ঘোষণা করলাম তখন ওই চেয়ারম্যান তো আমাকে বের করে দিতে পারেন। তাহলে তো কোনোদিন এখানে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না, কোনো নির্বাচন হতে পারবে না।

“যেই নির্বাচনে দাঁড়াবে তাকে বলবে যে, আপনাকে বহিষ্কার করা হল। সুতরাং পুরো জিনিসটা, পুরো সিদ্ধান্ত বেআইনি।”

তিনি বলেন, “নেতা-কর্মীদের প্রতি আমাদের বার্তা হল, জাতীয় পার্টিকে আমরা ভাঙতে দেব না, আমরা কাউন্সিল করতে তাদের বাধ্য করব।

“সেই কাউন্সিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে এই পার্টিকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ রেখে আমরা ভবিষ্যতের দিকে এগুবো।”

‘আমরা তিনটা দাবির বাস্তবায়ন চাই’

আনিসুল ইসলাম বলেন, “আমরা দুইটা বিবৃতি দিয়েছি ইতিমধ্যে। আমরা বলেছি, গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা, এটা বাতিল করেন, আমরা পার্টির আর্থিক স্বচ্ছতা চাই এবং পার্টির বৃহত্তর ঐক্য চাই। এই তিনটা জিনিসের কথা আমরা বার বার বলে আসছি।

“পাবলিকলি আমরা এমন কিছু করি নাই যেটাতে কেউ বলতে পারবে যে, আমরা পার্টির স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমরা মনে করি, আমরা স্বপদে আছি।”

‘উনি (শামীম হায়দার পাটোয়ারী) স্বঘোষিত, মহাসচিব চুন্নুই’

সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম বলেন, “চেয়ারম্যান যেসব নিয়োগ দিয়েছেন সেগুলো অবৈধ। বর্তমানে যাকে স্বঘোষিত বলব, মহাসচিব (শামীম হায়দার পাটোয়ারী), তিনি সেই পদে নাই। পার্টির মহাসচিব একজনই, তিনি হচ্ছেন-মজিবুল হক চুন্নু।

“আজকে এই সংবাদ সম্মেলনে যারা বসে আছেন আমরা সকলেই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, আমরা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা এই পার্টিতে আছি এবং আমরা আশা করি এই পার্টিতে থাকব।”

‘মিলিটারি ক্যু‘র মত ঘটনা’

মৃত্যুর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে ‘অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান’ ঘোষণা করেছিলেন দাবি করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “জিএম কাদের সাহেব, আমিও এই পার্টির অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান ছিলাম। আমাকে যখন অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান করেন তখন এইচএম এরশাদ সাহেব সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে এই পদে বসিয়েছিলেন। আর জিএম কাদের কীভাবে অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান হন?

“রাতের অন্ধকারে যে লোকটি (এইচএম এরশাদ) মৃত্যুপথযাত্রী, রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে, জোর করে তার সই নেওয়া হয়। এটা হচ্ছে, জাস্ট মিলিটারি ক্যু যেমন হয়, ঠিক সেইরকম।”

তিনি বলেন, “আপনারা বলতে পারেন, সেই সময়ে কেন প্রতিবাদ করেননি। কারণ আমাদের পার্টি এমনিতেই সরকারের অত্যাচারে জর্জরিত ছিল, সেখানে আমরা আর কিছু করিনি। এরশাদ সাহেব খুব অসুস্থ ছিলেন, তার দিকে তাকিয়ে আমরা কিছু করিনি।

“একটা গণতান্ত্রিক পার্টির ক্ষমতা হস্তান্তর রাতের অন্ধকারে এভাবে হয় না। জিএম কাদেরের প্রত্যেকটা জিনিসই অগণতান্ত্রিক মনোভাব প্রকাশ পায়, স্বৈরাচারী মনোভাবে প্রকাশ পায়।”

‘উনি একটা লাভ লেটার ‍দিলেন’

সদ্য অব্যহতিপ্রাপ্ত রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “আজকে আমরা একত্রিত হয়েছে কেন? তার চিঠি পেয়েছি। কাদের (জিএম কাদের) ভাই আপনার লাভ লেটার আমরা পেয়েছি। কিন্তু এটা কোনো সুস্থ রাজনীতিবিদ, এই ধরণের কাজ করতে পারেন না।

“আমাদের ঘামে, আমাদের পরিশ্রমে… আমাদেরকে অব্যহতি দিয়েছেন, সদস্য পর্যন্ত আপনি রাখেন নাই। এটা কি রাজনৈতিক আচরণ আমার জিজ্ঞাসা।”

জিএম কাদেরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আপনাকে বহিষ্কার করি নাই, আমরা আপনাকে ফেলে দিতে চাই না। আমরা দলকে শক্তিশালী করব, বৃহত্তর ঐক্য করব।

“আবারো বলব, আসনে আপনাকে আমরা সম্মান দেবো।দল ভাঙবে, দল ছোট হবে এই রাজনীতি আমরা করব না।”

দলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং দীর্ঘদিন মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রুহুল আমিন বলেন, “এই দলে ষড়যন্ত্র করে অনেককে বাদ দেয়া হয়েছে… একটি শক্তিশালী গোষ্ঠির ষড়যন্ত্র। আমরা যারা শুরু থেকে ছিলাম, আজকে এভাবে আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।”

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শেখ শহীদুল ইসলাম, মোস্তফা জামাল হায়দার, আবদুস সাত্তারের নাম করে তাদের ষড়যন্ত্র করে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

‘বউকে নিয়ে সংসার হয়, রাজনীতি করা যায় না’

জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “আপনারা জানেন, জাতীয় পার্টি ছোট হতে হতে আজ ধবংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। আমি আরেকটা জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান। আমার সাথে আরও অনেকে আছেন।

“আমি মনে করি যে, একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি, জাতির এই ক্রান্তিকালে আবার আমরা দেশকে কিছু দিতে পারব যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আজকে এই কি দেখতেছি? সবাইকে বের করে দেবেন? একা থাকবেন। একা একটি কোম্পানি করা যায়, ঘর-সংসার করা যায়, বউয়ের সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না।”

ভারতকে ইংগিত করে তিনি বলেন, জিএম কাদের ‘ওদের দলের চেয়ারম্যান’। ভারত থেকে ফিরে এসে উনি বললেন, ‘আমি ভারতের অনুমতি ছাড়া একটি কথাও বলতে পারব না’।

“আরে দলকে অন্য দেশে বন্ধক রেখে কি দল করা যায়? এদেশের মানুষ কি এটা মানে… সেদিনই তো দল চলে গেছে। আজকে সময় এসেছে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক পন্থায় জাতীয় পার্টি করতে চাই।”

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে অসম্মান করে জিএম কাদের বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে কাজী ফিরোজ রশীদ তার সমালোচনা করেন। বলেন, “এই লোক অসুস্থ লোক, মাথা খারাপ লোক, মানসিকভাবে অসুস্থ… তার সাথে রাজনীতি করা যায় না।”

‘আমার দুঃখ একটাই’

মহাসচিব থেকে অব্যহতিপ্রাপ্ত মজিবুল হক চুন্নু বলেন, “আমি মহাসচিব হিসেবে জিএম কাদেরের সঙ্গে প্রায় পৌনে চার বছর কাজ করেছি। ওনার কী দোষক্রটি, সেটা বলব না। তবে আমি মহাসচিব হিসেবে ওনার প্রতি পুরোপুরি আনুগত্য রেখে তার সাথে মানিয়ে নিয়ে কাজ করেছি।

“আমরা শুধু ‍দুঃখ একটাই, যেকোনো দলের যেকোনো ব্যক্তি কোনো পদে সবসময় থাকবে না। উনি আমাকে পছন্দ না করতেন তাহলে উনি আমাকে বললেই পারতেন।”

পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১ ক ধারাকে স্বৈরতান্ত্রিক ধারা আখ্যায়িত করে তা বাদ দিতে জিএম কাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছেন দাবি করে চুন্নু বলেন, “এমন হয়েছে যে, ২৮ জন কর্মীকে পদোন্নতি দিয়েছেন (চেয়ারম্যান), এটা মহাসচিব হিসেব আমি জানি না। আমি বলেছিলাম, এটা একটা অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক ধারা, এটা বাদ দেন। উনি পরিবর্তন করেন নাই।”

সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাজমা আখতার, জহিরুল ইসলাম জহির, মাশুরুর মওলা, মোস্তফা আল মাহমুদ।

খুলনা গেজেট/এসএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!